বাংলাদেশ, ICT শিক্ষা এবং আমার মতামত

আমার মতে, বাংলাদেশ সরকারের সব থেকে ভাল সিদ্ধান্ত গুলির মধ্যে একটা হচ্ছে ইন্টারমিডিয়েট লেভেলে ICT শিক্ষা যোগ করা। তবে আমার মনে হয় এটার ইম্প্লিমেন্টেশন হয়েছে সব থেকে বাজেভাবে।

 
প্রথমে, বিভিন্ন অত্যন্তভাবধারী গণিত শিক্ষকদের অধিকাংশ কলেজে ICT ক্লাস নেবার জন্য দেওয়া হয়েছিল। যেটা এখনও বাহাল আছে কিনা জানি না। তাদের কাছে ICT ক্লাস মানেই ছিল সংখ্যাতত্ব পড়ানো। এটা তাদের দোষ না, নেটওয়ার্ক তাদের জানার কোন দরকার নাই আর প্রোগ্রামিং মানেই তাদের কাছে ফোরটান হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু না।
 

তারপর, একটা সকলের জন্য বাধ্যতামূলক বিষয় এ প্রথম প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ হিসাবে “C” যোগ করাটা মোটেও উচিৎ হয় নি বলে মনে করি। মানবিক শাখার ঐ শিক্ষার্থীটার কোন কম্পিউটারের ইন্টারন্যাল জানার দরকার নাই। তার এটাও জানার দরকার নাই সিতে বিভিন্ন বিষয় কিভাবে কাজ করে। সি প্রোগ্রামিং করতে হলে অনেক জিনিস জানতে হয় এবং জানার জিনিসগুলা পরবর্তীতে সাহায্য করে এটা নিশ্চিৎ কিন্তু ঐ শিক্ষার্থীর সেটা জানার দরকার নাই। বরঞ্চ এই জটিল জিনিসগুলা অনেকের প্রোগ্রামিং শেখার শখটাই উড়িয়ে দেয় অনেকক্ষেত্রে। তাদের কাছে প্রোগ্রামিং সাধারন না হয়ে হিব্রু মনে হয়। তাই বলে কি তাদের প্রোগ্রামিং শেখার দরকার নাই? অবশ্যই আছে। বর্তমানে কম্পিউটার প্রায় প্রত্যেকের আছে এবং যেই তাদের কম্পিউটারে করা যায় এমন কাজ আরেকটু সহযে করতে চাই তাদের প্রত্যেকেরই প্রোগ্রামিং জানার দরকার আছে। একটা কাজ আপনার করতে হয়ত ১ ঘন্টা লাগে, সামান্য কয়েক লাইন কোড লিখে তা কয়েক মুহুর্তে করতে পারলে বাকি সময়টা বিনোদোনমূলক কাজে ব্যবাহর করতে পারেন অথবা আমার মত ঘুমিয়ে কাটাতে পারেন। আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি, সি এর বদলে পাইথন থাকলে শিক্ষার্থীরা খুব দ্রুত “কাজকরে” এমন প্রযেক্ট দাঁড় করাতে পারত। আমার নিজেরই সি ব্যবহার করে কাজ করে এমন কোন প্রযেক্ট নাই। ফাউ ক্যালকুলেটর, ভূয়া লাভ ক্যালকুলেটর হ্যান ত্যান বাদে। অপরদিকে পাইথন ব্যাবহার করে খুব সহযেই প্রযেক্ট করা যায়। অন্যের কোড ইডিট করাও খুব সহয। মানবিক শাখার ঐ শিক্ষার্থীটির যে কোন সময় একটা ফোন কেনা লাগতে পারে, একাধিক চয়েসের সাথে কম্পেয়ার করা লাগতে পারে। সে ম্যানুয়ালি ঘন্টার পর ঘন্টা রিসার্চ না করে ছোট্ট স্ক্রিপ্ট লিখেই কাজটা করে ফেলতে পারত। Good Luck doing that with C!

যাই হোক, আমি বলছি না সি শেখার কোন দরকার নাই। একটা নির্দিষ্ট এবং অত্যন্ত সংকীর্ণ গ্রুপের মানুষের জন্য সি এর বিকল্প নাই। এরা সিএস পড়তে চাওয়া বা খুব ক্লোজলি হার্ডওয়ারের সাথে কাজ করা মানুষজন। চারিদিকে তাকালে এদের খুব বেশি খুজে পাওয়া যাবে না। যদিও বাংলাদেশের জাতীয় সাবজক্ট সিএসই হলেও অধিকাংশই সাবজেক্টটি ভোগাস অর্থবৃত্তের ট্যাগ থাকার কারনে বা স্ট্রেইট ভাব নেবার জন্য বেছে নিয়ে সব মুখস্থ করে পার করে (সিএসই পড়া মানেই ভাল প্রোগ্রামার হওয়া না, এটা একটা পার্ট মাত্র)। সব মানুষের দরকার ফাংশনালিটি, এজিলিটি যেটা পাইথনের সি এর থেকে অনেক বেশি  – দৈবিক জ্ঞান সবার দরকার নাই। পাইথন যেখানে ইংরেজীর মত সিন্ট্যাক্স ব্যবহার করে হাজার হাজার লাইব্রেরির সহয়তায় মিনিটের মধ্যে প্রযেক্ট প্রোটোটাইপ দাঁড় করাতে পারে সেখানে কেন সি এর মত একটা ঝামেলাপূর্ণ কিন্তু এলিগেন্ট জিনিস সবাইকে শেখানোর চেষ্টা করতে হবে সেটাই আমি আজ পর্যন্ত বুঝতে পারলাম না, হয়ত পারবও না।

উপরে যা লিখা, তার সম্পূর্ণটাই আমার ইন্টারমিডিয়েট জীবনের অভিজ্ঞতা। এটার সাথে আপনার অভিজ্ঞতা মিলতেই হবে এমন কোন কথা নাই। আমি পাইথন নিয়েই কাজ করি বলে পাইথন গুন গাইছি এমনটাও ভাবার কোন কারন নাই। বাংলাদেশের বাইরের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে সি এর বদলে পাইথন শেখানো হয়, প্রথম ল্যাঙ্গুয়েজ হিসাবে, তার পেছনে অবশই একটা কারন আছে। সেই কারনটা সবাই যত তাড়াতাড়ি বুঝতে পারবে, ততই মঙ্গল বলে আমি মনে করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *